ইসলামী আন্দোলনঃ সাফল্যের শর্তাবলী - সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী
লেখকঃ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী
অনুবাদক:- আবদুল মান্নান তালিব
ভূমিকাঃ আলোচিত বিষয় তিনটিঃ
১. ইসলামী সমাজ প্রত্যাশীদের জ্ঞাতব্য বিষয়
২. ময়দানের কার্যক্রম
৩. পরবর্তী আলোচনা
ইসলামী সমাজ প্রত্যাশীদের জ্ঞাতব্যঃ বিষয় এর দুটি দিকঃ
১. নিরাশার কালোমেঘ
২. আশার আলোকচ্ছটা
নিরাশার কালোমেঘঃ
- ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খার অভাব নেই, আসল অভাব আগ্রহ ও উদ্যোগ গ্রহণের, তার চাইতে ও বেশী অভাব যোগ্যতার ।
- প্রভাবশালী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা।
- চারিত্রিক শক্তি ও ঐক্যের শক্তি অনুপস্থিত।
- অগণতান্ত্রিক সরকার
আশার আলোকচ্ছটাঃ
- লোকের যথেষ্ঠ সমাবেশ।
- জাতি সামগ্রিকভাবে অসৎপ্রবন, বিবেক ও বিচক্ষনহীন হলেও অশিক্ষা ও অজ্ঞতার দরূন তারা প্রতারিত।
- প্রতারণাকারীগণ সকল সুবিধা অর্জন করলেও দুটি সুবিধা অর্জন করতে পারেনিঃ
১. চারিত্রিক শক্তি
২. ঐক্যের শক্তি
ময়দানের কার্যক্রমঃ
১. সবর ও আন্তরিকতাপূর্ণ কাজ
২. উত্তেজনাহীন সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ।
৩. ব্যক্তি ও আত্মগঠন
৪. কর্মের সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচী গ্রহণ
পরবর্তী আলোচনাঃ
১. ব্যক্তিগত গুনাবলী
২. সামষ্টিগত গুণ
৩. ইসলাম প্রচার, দাওয়াত ও প্রতিষ্ঠায় সাফল্যের গুণ
৪. মৌলিক দোষ-ত্রুটি
৫. অভিপ্রেত ও অনভিপ্রেত গুণাবলী থেকে যুক্ত ও মুক্ত রাখার উপায়।
সাফল্য লাভের উপায়ঃ আলোচিত বিষয়ঃ ৫ টি
১. ব্যক্তিগত গুনাবলী
২. দলীয় গুনাবলী
৩. পূর্ণতাদানকারী গুনাবলী
৪. মৌলিক ও অসৎ গুনাবলী
৫. মানবিক দুর্বলতা
ব্যক্তিগত গুণাবলী : ৪টি
১. ইসলামের যথার্থ জ্ঞান : ইসলামী আকিদা বিশ্বাসকে জাহেলী চিন্তা কল্পনা ও ইসলামী কর্মপদ্ধতিকে জাহেলিয়াতের নীতি পদ্ধতি থেকে আলাদা করে জানতে হবে এবং জীবনের বিভিন্ন বিভাগে ইসলাম মানুষকে কি পথ দেখিয়েছে তা জানতে হবে।
■ ইসলামের যথার্থ জ্ঞানঃ ইসলামের নিছক সংক্ষিপ্ত জ্ঞান যথেষ্ট নয় বরং কমবেশী বিস্তারিত জ্ঞান থাকতে হবে। মুফতি বা মুজতাহিদ হতে হবে এমন কোন কথা নেই। তবে ইসলামকে জাহেলিয়াতের চিন্তাকল্পণা ও নীতি-পদ্ধতি থেকে আলাদা করে জানার জ্ঞান থাকতে হবে। কর্মীদেরকে বুঝানোর মত জ্ঞান থাকতে হবে। বুদ্ধিজীবি ও শিক্ষিত লোকদের দাওয়াত দেওয়ার মত জ্ঞান থাকতে হবে।
২. ইসলামের প্রতি অবিচল বিশ্বাস :
৩. চরিত্র ও কর্ম : কথা এবং কাজ এক হবে।
৪. দ্বীন হচ্ছে জীবনোদ্দেশ্য : জীবনের সকল কাজ দ্বীনের প্রতি কেন্দ্রীভূত হবে।
■ দ্বীন হচ্ছে জীবনোদ্দেশ্যঃ আল্লাহর বাণী বুলন্দ করা এবং দ্বীনের প্রতিষ্ঠা আমাদের জীবনের একটি আকাঙ্খার পর্যায়ভুক্ত হবে না বরং এটিকে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যে পরিণত করতে হবে। দুনিয়ার সকল কাজ অবশ্য করা হবে কিন্তু আমাদের জীবন এই উদ্দেশ্যে আবর্তিত হবে। এজন্যে আমরা নিজেদের সময়, সামর্থ্য, ধন-মাল ও দেহ-প্রাণের সকল শক্তি এবং মনমস্তিষ্ককেও পরিপূর্ণ যোগ্যতা ব্যয় করতে প্রস্তুত থাকব। এমনকি প্রয়োজন হলে আমাদের জীবন দিতেও পিছপা হবোনা।
দলীয় গুনাবলীঃ চারটি
১. ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা
২. পারস্পরিক পরামর্শ
৩. সংগঠন ও শৃঙ্খলা
৪. সংস্কারের উদ্দেশ্যে সমালোচনা।
পূর্ণতাদানাকরী গুনাবলীঃ ৫টি
১. খোদার সাথে সম্পর্ক ও আন্তরিকতা
২. আখেরাতের চিন্তা
৩. চারিত্রিক মাধুর্য
৪. ধৈর্য্য
৫. প্রজ্ঞা
■ চরিত্র ও মাধুর্যঃ চরিত্র একটি বিজয়ী শক্তি। খোদার পথে যারা কাজ করবে তাদের উদার হৃদয় ও বিপুল হিম্মতের অধিকারী হতে হবে। মানবতার দরদী হতে হবে। তাদের হতে হবে ভদ্র ও কোমল স্বভাবসম্পন্ন, আত্মনির্ভরশীল ও কষ্টসহিষ্ণু, মিষ্টভাষী ও সদালাপী। তাদের দ্বারা কারো কোন ক্ষতি হবে এমন ধারনাও কেহ পোষণ করবে না বরং তাদের নিকট কল্যাণ ও উপকার কামনা করবে। তারা প্রাপ্যের চাইতেও কমে সন্তুষ্ট থাকবে। প্রাপ্যের চাইতে বেশী দিতে প্রস্তুত থাকবে। তারা মন্দের জবাব ভালো দিয়ে দিবে। তারা অন্যের সেবা গ্রহনে নয় বরং অন্যকে সেবা করে আনন্দিত হবে। চরিত্রের এই গুণাবলী তলোয়ারের চাইতেও ধারালো এবং হীরা, মণিমুক্তার চাইতেও মূল্যবান। দুনিয়ার কোন শক্তিই তাকে পরাজিত করতে পারবেনা।
■ ধৈর্যঃ ধৈর্য্যরে একটি অর্থ হচ্ছে তাড়াহুড়ো না করা। নিজের চেষ্টার ত্বরিৎ ফল লাভের জন্যে অস্থির না হওয়া এবং বিলম্ব দেখে হিম্মত হারিয়ে না ফেলা। একের পর এক ব্যর্থতার সম্মুখিন হয়েও পরিশ্রম থেকে বিরত না হওয়া। ধৈর্য্যরে দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে তিক্ত স্বভাব, দুর্বল মত ও সংকল্পহীনতার রোগে আক্রান্ত না হওয়া। ধৈর্য্যরে আরেকটি অর্থ হচ্ছে সকল প্রকার ভয়-ভীতি ও লোভ-লালসার মোকাবেলায় সঠিক পথে অবিচল থাকা। শয়তানের উৎসাহ প্রদান ও নফ্সের খাহেশের বিপক্ষে নিজের কর্তব্য সম্পাদন করা।
ধৈর্যের অর্থঃ
১. তাড়াহুড়া না করা, নিজের প্রচেষ্টার ত্বরিত ফল লাভের জন্য অস্থির না হওয়া এবং বিলম্ব দেখে হিম্মত হারিয়ে না বসা।
২. তিক্ত স্বভাব, দুর্বল মত ও সংকল্পহীনতার রোগে আক্রান্ত না হওয়া।
৩. বাধা বিপত্তির বীরোচিত মোকাবেলা করা এবং শান্ত চিত্তে লক্ষ্য অর্জনের পথে যাবতীয় দুঃখকষ্ট বরদাশ্ত করা।
৪. দুঃখ-বেদনা, ভারাক্রান্ত ও ক্রোধান্বিত না হওয়া এবং সহিষ্ণু হওয়া ও ধৈর্য্যরে একটি অর্থ।
৫. ধৈর্য্যের এক অর্থ হচ্ছে সকল প্রকার ভয়-ভীতি ও লোভলালসার মোকাবেলায় সঠিক পথে অবিচল থাকা, শয়তানের উৎসাহ প্রদান ও নফসের খাহেশের বিপক্ষে নিজের কর্তব্য সম্পাদন করা।
■ প্রজ্ঞাঃ
১. পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল
২. বিচার বিবেচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা
৩. জীবন সমস্যা বুঝা ও সমাধানের যোগ্যতা রাখা।
প্রজ্ঞার অর্থ :
১. প্রজ্ঞার অভিব্যক্তি হচ্ছে মানবিক মনস্তত্ব অনুধাবন করে সেই অনুযায়ী, মানুষের সাথে ব্যবহার করা এবং মানুষের মনের উপর নিজের দাওয়াতের প্রভাব বিস্তার করে তাকে লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত করার পদ্ধতি অবগত করা।
২. নিজের কাজ ও তা সম্পাদন করার পদ্ধতি জানা এবং তার পথে আগত যাবতীয় বাধা বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতাবিরোধিতা মোকাবেলা করাও প্রজ্ঞার অভিব্যক্তি।
৩. পরিস্থিতির প্রতি নজর রাখা, সময় সুযোগ অনুধাবন করা এবং কোন্ সময়ে কোন্ ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে, এসব জানাও প্রজ্ঞার পরিচয়।
৪. দ্বীনের ব্যাপারে সূক্ষ্ম তত্ত্বজ্ঞান ও দুনিয়ার কাজকারবারের ক্ষেত্রে তীক্ষ্ম দূরদৃষ্টি রাখাই হচ্ছে সবচাইতে বড় প্রজ্ঞার পরিচয়।
মৌলিক অসৎ গুণাবলী :
১. গর্ব ও অহংকার বাঁচার উপায়ঃ
- বন্দেগীর অনুভূতি,
- আত্মবিচার,
- মহৎ ব্যক্তিদের প্রতি দৃষ্টি,
- দলগত প্রচেষ্টা।
২. প্রদর্শনেচ্ছা বাঁচার উপায় :
- ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ও
- সামগ্রিক প্রচেষ্টা।
৩. ত্রুটিপূর্ণ নিয়ত। ৪. নিয়তে গলদ থাকলে সৎ কাজের ভিত্তি স্থাপন করা যায় না। নিয়তের সাথে কোন ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকা উচিৎ নয়। নিয়তের ত্রুটির প্রভাব অবশ্যই কাজের উপর পড়ে এবং ত্রুটিপূর্ণ কাজ নিয়ে এমন কোনো প্রচেষ্টায় সাফল্য লাভ করা সম্ভব নয়। যার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মন্দকে খতম করে ভালোকে প্রতিষ্ঠিত করা।
মানবিক দুর্বলতাঃ তেরটি
১. আত্মপূজা
২. আত্মপ্রীতি
৩. হিংসা- বিদ্বেষ
৪. কুধারণা
৫. গীবত
৬. চোগলখুরী
৭. কানাকানি ও ফিসফিসানী
৮. মেজাজের ভারসাম্যহীনতা
৯. সামষ্টিক ভারসম্যহীনতা
১০. একগুয়েমী
১১. একদেশদর্শীতা
১২. সংকীর্ণমনতা
১৩. দুর্বল সংকল্প।
আত্মপ্রীতিঃ থেকে বাঁচার উপায়ঃ ২টি
১. তাওবা ও এস্তেগফার
২. সত্যের প্রকাশ
No comments