• তাজা খবর

    হাসন রাজা মিউজিয়াম। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিশাল সংগ্রহশালা।

     সুনামগঞ্জ জেলা। 

    ভাটি বাংলার দেশ বলে সকলের কাছে পরিচিত। ছোটবড় অসংখ্য হাওরে বিস্তৃত পুরো সুনামগঞ্জ জেলা। বর্ষা মৌসুমে নৌকা ই একমাত্র যানবাহন। শুষ্ক মৌসুমে হাওরের ছোট ছোট রাস্তা দিয়ে মোটর সাইকেল দিয়ে মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। এমনি এক বিরূপ প্রকৃতিতে নবাব পরিবারে বেড়ে উঠেছেন মরমী সাধক হাসন রাজা। 
    মরমী সাধক হাসন রাজা 

    সুনামগঞ্জের কথা আসলেই প্রথমে যার নামটি সবার মনে ভেসে উঠে তিনি মরমী সাধক হাসন রাজা। হাসন রাজার দেশ সুনামগঞ্জ। হাসন রাজার জমিদারী সে এলাকা জুড়ে ছিলো। 
    সুনামগঞ্জের তেঘরিয়ায় অবস্থিত হাসন রাজার মিউজিয়াম।


    হাসন রাজা সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রী পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। ৭ পৌষ ১২৬১ ও ২১ ডিসেম্বর ১৮৫৪ সালে দেওয়ার আলী রাজা চৌধুরী ও মোছাঃ হুরমত জান বিবির ঘর আলোকিত করে জন্ম হয়ে হাসন রাজার। হাসন রাজার পূর্বপুরুষের বাসস্থান ছিলো ভারতের অযোধ্যায়। বংশ পরস্পরায় তার হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিলেন। পরে তারা যশোর জেলা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিলেটে বসবাস শুরু করেন। তাঁর দাদা বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহদেব বা বাবু রায় চৌধুরী সিলেটে আসার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। ১৮৬৯ সালে তার পিতা মারা যান এবং বাবার মৃত্যুর ৪০ দিন পর তার বড় ভাই ওবায়দুর রাজা মারা যান। তাই মাত্র ১৫ বছর বয়সে হাসন জমিদারীতে অভিষিক্ত হন। 
    হাসন রাজার জমিদারীর দলীলপত্র

    হাসন রাজা প্রথম জীবনে খুব ভোগ বিলাসী মনমানসিকতা মানুষ ছিলেন। তার বিলাসী জীবনের গল্প অনেককে শিহরিত করে। জাদুঘর ঘুরে আসলে তা কিছু টের পাওয়া যায়। তার  প্রিয় দুটি ঘোড়া ছিলো, একটির নাম জং বাহাদুর অপরটি চান্দমুশকি। এ রকম লোকে ‍মুখে আরো ৭৭ টি ঘোড়ার নাম পাওয়া যায়। পাখি পালনে তার বেশ শখ ছিলো। জাদুঘরে তার সকল পোষা পাখির নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। 
    হাসন রাজার পোষা ঘোড়া ও পাখির নামের তালিকা

    লোকে মুখে  শ্রুতি আছে হাসন রাজা একদিন আধ্যাত্মিক স্বপ্ন দেখার পর নিজেকে বদলানো শুরু করেন। তিনি বহু কবিতা লিখেন । তার গানের কথা সর্বজন স্বীকৃত। ১৯০৭ সালে তার ২০৬টি গান নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত গাওয়া তার গানের সংখ্যা ৫৫৩টি কিন্তু অনেকে মনে করেন তার গানের সংখ্যা হাজারেরও বেশি। 
    হাসন রাজাকে নিয়ে লিখা কিছু গ্রন্থমিউজিয়ামে অন্যতম বিষয় হলো তার নিজের হাতের লেখা সংরক্ষিত রয়েছে। নিজ বংশের একটি বিশাল গবেষনা দলিলও রয়েছে সেখানে। 
    হাসন রাজার নিজ হাতের লেখা
    বাউল সাধক রাধারমনের স্বহস্থে লিখা দলিল
    প্রাচীন সিলেটি ভাষা নাগরি লিপিতে লেখা ‍পুতির অংশ
    পরিবারিক  ইতিহাস নিয়ে নিজ গবেষনা নথিপত্র

    হাসন রাজার ইতিহাস ও ঐতিহ্যে জানতে ঘুরে আসতে পারেন তার সেই বাড়ীতে গড়ে উঠা মিউজিয়াম থেকে।
    হাসন রাজা ও তার স্ত্রীর ব্যবহৃত পুরানিক কড়ম (কাঠের জুতা) 

    হাসন রাজার ব্যবহৃত আলখেল্লা, পরিবারিক তলোয়ার, একতার, তবলা প্রভৃতি রাখা আছে  এখানে

    ১০০ শ বছরের পুরনো নারিকেল কোরানী 

    ব্যবহৃত তৈজসপত্র

    হাসন রাজার ব্যবহৃত ক্যাশবাক্স


    মরমী এ সাধক ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীতে  ইন্তেকাল করেন। তার মায়ের পাশে তাকে কবর দেয়া হয় । কবরটি তিনি নিজ হাতে তৈরি করেছিলেন।
    মায়ের কবরের পাশে নিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মরমী সাধক হাসন রাজা 

    পুরো মিউজিয়াম এক নজরে ভিডিও দেখতে  Hason Raja Museum on Youtube এ ক্লিক করুন। 

    কোন মন্তব্য নেই